বাবার সাথে অভিমান

বাবা শব্দটির ব্যাপ্তি, পরিসীমা মাপা বা ব্যাখ্যা করা যায় না। এর বিস্তৃতি মানুষের শিশুকালের দোলনা থেকে বৃদ্ধ কালের হুইল চেয়ার পর্যন্ত। এর উপলব্ধি প্রতিটি গ্রন্থি থেকে শিরা-উপশিরা পর্যন্ত। বাবাকে নিয়ে কোন ছোট গল্প লেখা যায় না। লিখতে হয় ভলিউমের পর ভলিউমের উপন্যাস। বাবার ঋণ শোধ করা যায় না। যে বাবা সন্তানের জন্য রাতের পর রাত জেগে ছিলো সে বাবার ঋণ শোধ করতে হয় হাসপাতালের মৃত্যু শয্যায় বসে। যে বাবা প্রথম বর্ণমালা শিখিয়েছেন, সে বাবাকে একদিন বড় কোন সার্টিফিকেট হাতে তুলে দিয়ে বলতে হয় বাবা এটা তোমার ডিগ্রি। আজ থেকে তুমিই ডাক্তার তুমিই ইঞ্জিনিয়ার। যে বাবা কনিষ্ঠ আঙুল ধরে শিশুকে প্রথম হাঁটতে শিখিয়েছিল, শিশু বড় হয়ে বাবার ঠিক ওই আঙুল ধরে হাসপাতালের বারান্দায় হাঁটাতে হয়। সন্তানকে মানুষ করার জন্য উদ্গ্রীব ছিলেন যে বাবা, একদিন সন্তান সে মানুষ হওয়ার মাঝেই বাবা শব্দের সার্থকতা। যে বাবা একদিন চকলেট খেতে বারণ করতেন, ডায়াবেটিসের জন্য সে বাবা থেকে একদিন মিষ্টির প্যাকেট লুকিয়ে রাখতে হয়। ছোট বেলায় দুষ্টুমির জন্য বাবার যে বকুনি, বাবার শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বৃদ্ধ বয়সে সে বকুনি বাবাকে দেওয়া। পারিবারিক হাজার বায়না আর চাওয়া দিয়ে বাবার জীবন ভরপুর থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে সন্তানের জুতা খুঁজে দেওয়া থেকে রাতে পড়ার টেবিল পর্যন্ত বাবাদের দায়িত্বের শেষ হয় না। হঠাৎ যখন কেউ বিপদে পড়ে তখন বুঝা যায় বাবার গুরুত্ব। যখন হঠাৎ টাকার দরকার হয়, যখন আর কেউ নেয় যে তাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করবার ঠিক তখন মনে পড়ে বাবার হাজার বকুনি সত্ত্বেও টাকা দেয়া। হঠাৎ আকস্মিক কোন বিপদে বাবা হতেন বট বৃক্ষ। ছাতার মত রোদ বৃষ্টিতে ছায়া হয়ে থাকতেন মাথার উপর। সন্তানের কোন ব্যর্থতার গ্লানি, দুঃখ ভরা চোখের ভাষা বাবা বুঝতে পারতেন। কিন্তু বাবাদের চোখের পানি সন্তানেরা কখনো দেখতে পেত না। বাবারা কাঁদতেন খুবই গোপনে, নীরবে নিভৃতে।

আমার জন্মের পর থেকেই বাবা থাকতেন বিদেশে, দেশে আসতেন ঠিক দুবছর পরপর। সে হিসেবে, আমার জীবনে খুব কম  উচ্চারিত শব্দ ‘বাবা’। হঠাৎ একদিন দেখতাম আম্মার কাছে লেখা বাবার একটা চিঠি। আম্মা কাছে হলেও আম্মা জায়নামাজে বসে ইয়া বড় পাওয়ারী চশমা পড়ে ওই চিঠি পরতেন। আর আমরা ভাই-বোনেরা গোল হয়ে শুনতাম। এইবারের চিঠিতে লিখেছেন বাবা কয়েক দিন পর দেশে আসবেন। আমরা-তো বেজায় খুশি। সেই দিন থেকে পড়াশোনা বাক্স বন্দী। দিন গণনা শুরু। যেন অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চাইনা। বাবাকে এয়ার পোর্ট থেকে আনতে যাবো। কাঁচের দেওয়ালের এপাশ থেকে বলে উঠবো ওইযে বাবা, ওইযে বাবা । একদিন বাবা আসলেন। আমার জন্য সিকো ফাইভ ঘড়ি আনলেন। মাথার টুপি থেকে পায়ের জোতা সহ সব আনলেন। এমনি কি আমার প্রিয় লাল লুঙ্গি আনতেও ভুললেন না। কিছুদিন যেতে না যেতে আমার চলা ফেরার উপর বাবার কড়া নজরদারি। কয়েক মাসের মধ্যেই যেন বাবা আমাকে বড় করে, মানুষ করে তারপর বিদেশে ফিরবেন। এর প্রভাবে আমার চলাফেরায় আমূল পরিবর্তন। বাবা সাথে বাজারে যাও। রোদে দৌড়া-দৌড়ি করো না। সন্ধ্যার পরপর পড়তে বসো। রাতে খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো।

আমার ছোট আপা বাবার কাছে প্রথম প্রথম যেতো না। এমনকি বাবা বলে ডাকতেও শরম পেত। এ নিয়ে আমার বাবারও ভীষণ রাগ “আমার মেয়ে আমাকে বাবা বলে ডাকে না।” এরপর বাবার ঘোষণা, “যে আমাকে বাবা বলে ডাকবে তাকে প্রতি বাবা ডাকে ৫ টাকা করে দেওয়া হবে”। আমি এই সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। সাথে সাথে বাবার গলা জড়িয়ে বাবা বাবা ডাকতে লাগলাম। হোকনা সে বাবা ডাকা টাকার জন্য। বাবাকে বাবা বলে ডাকতে দোষের কি? কিন্তু আমার পাষাণ বোনের শরম তখন আরও বেড়ে গেলো। এ নিয়ে যে কত হাসাহাসি, “মেয়ে বাবাকে বাবা বলে ডাকতে শরম পায়।”

একদিন আমি আর ছোট আপা সন্ধ্যায় হারিকেনের আলোয় পড়তে বসলাম। আমার আলো কম ওর আলো বেশি। এ নিয়ে চলতো দু’জনের তর্ক যুদ্ধ। যুদ্ধের একপর্যায়ে হাতাহাতি তারপর মারামারি। ছোট আপা পরাজিত হয়ে আম্মা… বলে ডাক দিলো। এমন ডাক সে সব সময় দেয়। ওর এই আম্মা বলে চোখের পানির ডাকটাও আমি খুব উপভোগ করতাম। কিন্তু মাথায় ছিলোনা যে এখন তো বাবা আছেন। আর অমনি ওর ম্যাও ম্যাও আম্মা ডাকে ছুটে আসলেন বাবা। ওর নেকামো কান্নার ভিত্তিতে আমার ভাগ্যে ঝোটলো বাবার বকুনি আর হালকা উত্তম-মধ্যম। সংসারের আদুরে ছোট ছেলেকে এমন বকার এই অভিমানে আমি বেঁকে বসলাম। কিন্তু শুধু শুধু রাতের ভাত না খেয়ে যে ভুলই করলাম সেটা টের পেলাম রাতে ঘুমাতে গিয়ে। আম্মাও বাবাকে অনেক বকলেন, “বেড়াতে এসে ছেলেকে এমন বকাঝকা ঠিক না।” সবার সব চেষ্টার শেষ আশা আমার দাদি। পূর্বেও এমন কয়েক বার অভিমানে দাদি আমার রাগ ভাঙ্গিয়েছিলেন। এবার দাদির চেষ্টাও কাজ হলোনা। রাতে পেট চোঁ চোঁ করা ক্ষুধা নিয়ে ঘুমালাম। সকলে উঠে মক্তবে গেলাম। মক্তব থেকে ফেরার সময়ে অনেক বৃষ্টি হচ্ছিল। সব ছাত্ররা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি পড়া দেখছে। মক্তবের টিনের চালে ঝমাঝম বৃষ্টির শব্দ। কারো ভাই, কারো বাবা ছাতা নিয়ে এসে একজন একজন করে নিয়ে যাচ্ছে। কে আসবে আমাকে নিতে? ছোট ভাইয়া, বাড়ির জেঠা নাকি বাবা? আমিও পথ চেয়ে আছি। ওই যে কে যেন আসছে। দূর থেকে ঝুম বৃষ্টির কারণে ঠিক চেনা যাচ্ছে না। একটু একটু করে স্পষ্ট হচ্ছে। আরও স্পষ্ট হলো, আরও, আরও। আরে, এ দেখি বাবা। দুর থেকে এক চিৎকার, বাবা…. আমি এখানে। বাপ-ছেলে এক ছাতার নিচে। বাবা খুব শক্ত হাতে আমাকে গায়ের সাথে জড়িয়ে রেখেছিলেন, যেমন করে পাখি তার বাচ্চা কে ঠোঁট দিয়ে আঁকড়ে ধরে উড়ে চলে। আমিও খুব করে বাবার গায়ের সাথে এঁটে ছিলাম। তখন ঠিক বাবার রাতের বকুনির কথা মনে ছিলোনা।

একদিন বাবা আবার বিদেশে ফিরে গেলেন। সংসারের বোঝা টানতে। সন্তানদের অন্ন সংস্থান জোগাতে। নিজের সুখকে বিসর্জন দিয়ে। প্রবাস জীবনের কষ্টকে আপন করে। সন্তানের কাছে বাবাদের কোন দোষ বা অন্যায় বলে কিছু নেই। যা আছে তা শুধু অভিমান। অকৃত্রিম ভালোবাসার এই অভিমান। বাবা কেন শুধু শুধু সারা জীবন বিদেশ থাকতে গেলেন। আমাদের সুখে রাখতে গিয়ে নিজের সারা জীবন বিলিয়ে দিয়ে গেছেন। বাবার পাঠানো টাকায় কি আমাদের জীবনের সুখের সব? বাবাকে সারা জীবন তৃপ্তি ভরে যে বাবা ডাকতাম তাতে যে ওই পাঠানো টাকার চেয়ে ডের সুখের হত। বাবার গলা জড়িয়ে ধরে, বাবার কপালে ঘাম মুছে বাবাকে বলতাম, ”আজ কি অনেক কষ্ট হলো?”

এবার চিঠিতে লিখেছেন বাবা হজ্বে যাবেন। বাবা হজ্বে যাওয়ার আগে তাঁর সব ঋণ পরিশোধ করেছিলেন। আমাদের কাছে চিঠি লিখে ও টিএনটিতে কথা বলে হজ্বে যাওয়ার বিদায় নিয়েছিলেন। এমন ভাবে বিদায় নেওয়া যেন বাবা জানতেন তিনি আর ফিরছেন না। আমাদের অনেক আত্মীয়ের কাছে চিঠি লিখেছেন এইভাবে, চিঠির প্রথম অংশে নাম সম্বোধন জন্য কিছু ফাঁকা জায়গা আর শেষের অংশে সবার জন্য কিছু কমন কথা লিখে তারপর ফটোকপি। এরপর ফটোকপির প্রথম অংশে প্রত্যেক জনের নাম উল্লেখ করে ওই চিঠি জনে জনে পাঠিয়েছিলেন। চিঠির শেষ অংশের ভাষাও ছিল এমন,

”পর-সংবাদ এইযে, বিশেষ কথা হলো আমি আল্লাহর রহমতে চলিত মাসের ১৫ হইতে ২০ তারিখের মধ্যে পবিত্র হজ্বে যাওয়ার নিয়ত করেছি। আমার উপর যদি কোন রকম দাবি দাওয়া থেকে থাকে তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। এবং আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আল্লাহ তালা আমার মনের আশা পূর্ণ করে। আল্লাহ তালা যদি পবিত্র মক্কা শরিফ থেকে ফিরিয়ে আনে তাহলে আবার লিখব বলে আশা করি। আপনারা আমার জন্য খাস দিলে দোয়া করবেন। আমিও আল্লাহর পবিত্র ঘর মক্কা থেকে আপনাদের জন্য দোয়া করব।”

আম্মার কোরআন শরিফে রাখা বাবা সেই চিঠি। যে চিঠি ০২-০৩-১৯৯৯ তারিখে বাবা লিখেছিলেন। এ চিঠি লেখার ঠিক ২০ দিন পর ২২-০৩-১৯৯৯ তারিখে বাবা মারা যান।

হজ্ব পালন শেষে হজ্ব যাত্রীরা বাড়ি ফিরছেন। আমরা আমাদের হাজি বাবার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম। বাবা লাল সৌদি রুমালের পাগড়ি পড়ে বাড়ি ফিরবেন। সৌদি-আরবের খেজুর আনবেন। জমজম কূপের পানি আনবেন। আমাদের পথ চেয়ে থাকা আর শেষ হলো না। বাবা আমাদের বাড়িতে আর আসলেন না। আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে গেলেন ওনার আসল বাড়িতে। হজ্বের আগে তাওয়াফ করার সময় বাবা মারা যান। বাবার শেষ নূরানি চেহারা আর দেখা হলো না। বাবার জানাজায় আমরা শরিক হতে পারলাম না। কিন্তু আল্লাহ বাবাকে পছন্দ করেছেন বলে হজ্বব্রত লক্ষ হাজি দ্বারা জানাজা পড়িয়ে নিয়েছেন। বাবার কবরে এক মুঠো মাটি দিয়ে আমরা সৌভাগ্যবান হতে চেয়েছিলাম। তারচেয়ে পবিত্র নগরী মক্কাতে জান্নাতি পরিবেশে চীর নিদ্রায় শায়িত করে আল্লাহ ওনাকে সৌভাগ্যবান করলেন। আমরা বুক ভাসিয়ে কাঁদলাম। সৌভাগ্যবান বাবার সন্তান হতে পেরে চোখের পানিও আমাদের জন্য গর্বের হলো। মহানবী (স) এর নির্দেশনা। ইহরাম অবস্থায় কেউ মারা গেলে তিনি মাথা ও মুখ খোলা রেখে দাফন করতে বলেছেন। কারণ, কিয়ামত পর্যন্ত লোকটি ইহরামাবস্থায় থাকবে এবং লাব্বায়িক বলে বলে কিয়ামতের সমাবেশে উপস্থিত হবেন। এমন শুভ্র আলোকোজ্জ্বল শশ্রুময় বাবার সৌভাগ্যের কথা চিন্তা করে আমাদেরও বড় ঈর্ষা হল। এমন বাবার সন্তানেরা কাঁদেনা বরং নিজেও যাতে এমন সৌভাগ্যবান হতে পারে তার জন্য ব্যাকুল হৃদয়ে অপেক্ষায় থাকে। বাবার সাথে একদিন সাক্ষাৎ হবে সে জান্নাতে। দু’জন পাখি হয়ে ঘুরব জান্নাতের ফল বৃক্ষের ডালে ডালে।

বাবার খুব শখ ছিল তাঁর ছেলেরা পড়াশোনা করে একদিন অনেক বড় হবে। অনেক নাম কুড়াবে। বাবার মুখ, বংশের মুখ উজ্জ্বল করবে। আমি বাবার সেই ইচ্ছার পথে হাঁটার চেষ্টা করেছি। ইঞ্জিনিয়ার হয়েছি। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার হয়ে কি হলো? কাকে সার্টিফিকেট হাতে দিয়ে বলবো বাবা দেখ আমি ইঞ্জিনিয়ার হয়েছি? একদিন এই সার্টিফিকেট নিয়ে যদি বাবার কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারতাম এই দেখ বাবা আমার ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেট। কোথায় পাবো বাবার কবর? কোথায় খুঁজব বাবার কবর? বাবার কবরতো সৌদি আরবে। বাবা সেখানে শুয়ে আছেন পবিত্র নগরী মক্কাতে। সেখানে কারও কবরের কোনো চিহ্ন থাকে না। সবার কবর দেখতে একই রকম। তারপরেও তো বাবার কবরের পাশে দাঁড়ানো হতো। দূরে কোন নামহীন কবরের দিকে তাকিয়ে থেকে একবার বাবা ডাকা যেত। বাবার কবর মনে করে চোখের পানি ফেলে বাবার জন্য দোয়া করা যেত।

একদিন স্বপ্নে দেখলাম আমি বাবার বিদেশ থেকে আনা সেই লাল লুঙ্গি পড়ে বাবার সাথে মসজিদের পথে হাঁটছি। বাবা শক্ত করে আমার হাত ধরে আছেন। স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পরও বাবার হাতের স্পর্শের অনুভূতি ঠিকই টের পেয়েছি। শুধু পাশে চেয়ে দেখি বাবা নেই। বাবা আসলে আমাদের ছেড়ে যাননি। এখনো বিদেশে আছেন। পবিত্র নগরী মক্কাতে আছেন। হঠাৎ একদিন বাবা চলে আসবেন। এবার আসলে বাবাকে ইচ্ছেমতো বকে দেব। কি করেছো এত দিন বিদেশে? আমাদের ছাড়া থাকতে কি তোমার খুব ভালো লাগে? তুমি কি জানোনা আমরা তোমার জন্য কত কেঁদেছি? কত বুক ভাসিয়েছি? তুমি কি জানোনা আমরা তোমাকে কত ভালোবাসি? বাবা আসলে বেঁচে আছেন আমাদের প্রাণে। আমাদের জীবনে। আমাদের স্মৃতিতে। আমাদের প্রতিটা স্পর্শে। আমাদের মনের গভীর ভালোবাসায়।


লেখা: রাশেদুল হায়দার

ছবি গ্রাফিক্স: সৌরভ Saurov Sami

প্রুফ রিডিং: জয় Md.Mubarok Hossain

(ফেসবুকে কমেন্ট করতে এখানে ক্লিক করুন)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Post

শুভ জন্মদিন ২০২২

আজ আমার তেত্রিশ মতান্তরে পঁয়ত্রিশতম শুভ জন্মদিন! (বয়সে করোনাকালিন হিসেব বাদ দেয়া হয়েছে) ছবিটি আনুমানিক ২০ বছর আগের হারিকেন জমানার। ছত্রিশ ফিল্মের কোডাক ক্যামেরার। মেঘে মেঘে বয়স তো আর কম হলো না। সেই ১৫ টাকা সের চাল সময়কার ছেলে আমি। ৪০ টাকা নিয়ে বাজারে যেতাম। এর মধ্যে মাছ-তরকারি, মুদি সদায় সহ দুই টাকা বাঁচিয়ে .....

বই: প্রোডাক্টিভ মুসলিম

বইটি পড়ে কিছু ব্যাপারে আচার্য হয়েছি। বইটি হাতে নিয়ে পড়ার আগে মনে করেছিলাম, এর ভিতরে লেখা থাকবে শুধু কাজ আর কাজ। কিসের ঘুম, কিসের বিশ্রাম আর কিসের অবসর। হয়তো বলা থাকবে, এই দুনিয়াতে কি শুধু ঘুমাতে আসছেন। শুধু কাজ করেন আর অন্য কিছু নয়। পরবর্তীতে ঘুমের উপর চ্যাপ্টার পড়ে আরও বেশি আচার্য হয়েছি যে, .....

বই: ইন দ্য হ্যান্ড অব তা-লে-বা-ন

১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১। মঙ্গলবার। নিউইয়র্ক-বাসীর সকালটা শুরু হয় অন্যান্য দিনের মত! সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা নিউইয়র্কের লোকজন খুব সকালে উঠে যার যার অফিস শুরু করেছে। প্রতিদিনকার সকালের মত হয়তো কেউ কেউ চা-কপি দিয়ে মাত্র অফিস ডেক্সে ওইদিনের মত নিজেকে সেট করে নিচ্ছে। পৃথিবীকে নাড়া দিতে যাচ্ছে এমন কোন ঘটনা ঘটতে চলেছে তখনও এই .....

বই: ফজর আর করব না কাজা!

আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম! মাত্র ফজরের আজান হয়েছে। সামনের বাসার আঙ্কেলের বড় গেটের তালা খোলার খটখট আওয়াজ। তারপর আমার মোবাইলের এক নাম্বার এলার্ম ভেজে উঠলো। একরাশ বিরক্তিসহ এলার্ম বন্ধ করলাম। এই আলতো ঘুমের এমন ঝনঝন তালা খোলার শব্দ আর এলার্মের এমন ভিট-ঘুটে আওয়াজ সত্যিই বিরক্তিকর ছিলো। তারপর কোন রকম উঠে দায়সারা ভাবে নামাজ ঘরে .....

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ রিভিউ: এ আমি কি দেখলাম?

অফিস থেকে মনে হয় একটু তাড়াহুড়া করেই বের হয়েছি। আজকে বাংলাদেশের চির প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলা। কয়দিন আগেও এই অস্ট্রেলিয়াকে মিরপুরের মাঠে আমরা কচুকাটা করেছি। সেই হিসেব মতে আজ একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই উপভোগ করবো। টানটান উত্তেজনা থাকবে। বাংলাদেশ হাড় কাঁপানো ব্যাটিং করবে। মাঠ কাঁপানো ফিল্ডিং করবে। টানটান করে বাউন্ডারি হাঁকাবে। দর্শক সাড়ি থেকে বাংলাদেশ! .....

নাফাখুম জলপ্রপাত – নেটওয়ার্কের বাইরে একদিন

আজকে যাবো। কালকে যাবো। এই বর্ষায় যাবো। এমন করতে করতে এক ট্যুরের প্ল্যান চলে প্রায় দুই বছর ধরে। এর মধ্যে করোনা। লকডাউন। শাটডাউন। মাস্ক। স্যানিটাইজার ইত্যাদি ইত্যাদি পৃথিবীতে নতুন করে আগমন করেছে। অন্যদিকে নাই হয়ে গেছে অনেক পরিচিত মানুষ, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-অনাত্মীয়। প্রতি বছর একটা জংলী ট্যুর দেয়ার ইচ্ছে থাকে। বড়সড় একটু গ্রুপ করে কোন .....

All Post